যেভাবে লিখবে সায়েন্টিফিক পেপার

সায়েন্টিফিক পেপার কীভাবে লিখবে? কোন একটা সায়েন্টিফিক পেপার লেখার আগে কোন একটি কাজ বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে গবেষণা করতে হবে। গবেষণাটা যদি তুমি সায়েন্টিফিক মেথডলজি বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে করে থাক তবে পেপার লিখতে অনেক সহজ হবে। একটা কথা কাজ করার সময় খুব ভালো করে মনে রাখবে। যখনই কিছু করবে, নোটবুকে লিখে রাখবে। নতুন কোন তথ্য পেলে সূত্রসহ লিখে রাখবে। এইসব মেনে গবেষণা করলে গবেষণা করা কিন্তু খুব সহজ।
 
পুরো নিবন্ধ থেকে বিভিন্ন জিনিস ভালোভাবে কাজে লাগানোর জন্য প্রথমেই দুইটা টার্ম শিখতে হবে, সায়েন্স রাইটিং আরেকটা সায়েন্টিফিক রাইটিং। বাংলা করতে পারি বিজ্ঞান লেখা, বৈজ্ঞানিক লেখা। এই দুইটা কী জানলেই তোমরা খুব সহজে বুঝতে পারবে আসলে পেপার কীভাবে লিখতে হবে।

সায়েন্স রাইটিং এবং সায়েন্টিফিক রাইটিং

ধরো তুমি বিজ্ঞানের কোন একটা বিষয় যেমন রংধনুর আকৃতি কেন বৃত্তাকার হয় এটা কাউকে বুঝানোর জন্য একটা লেখা তৈরি করলে, তাহলে এটা হবে সায়েন্স রাইটিং বা বিজ্ঞান লেখা। আবার ধরো তুমি নিজে একটা জিনিস গবেষণা করে যেমন তোমার বাসার ফুল গাছে কোন ঋতুতে বেশি প্রজাপতি আসে বের করলে, এখন এটা যদি লিখে প্রকাশ করতে চাও তবে তা হবে সায়েন্টিফিক রাইটিং।

ব্যাপারটা অন্যভাবে আরও সহজে বুঝতে পারবে, সায়েন্স রাইটিং-এর পাঠক হল একেবারেই সাধারণ, অন্য কথায় যে কেউ, তিনি বাংলার শিক্ষক থেকে শুরু করে আদালতের বিচারক -যে কেউ হতে পারেন। আর সায়েন্টিফিক রাইটিং-এর পাঠক কিন্তু অনেক নির্দিষ্ট- তুমি যে বিষয়ে লিখছ ওই বিষয় বা তার কাছাকাছি কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বা বেশ ভালো জানাশোনা আছে এমন ব্যক্তি।

যারা সায়েন্টিফিক রাইটিং পড়বেন তারা কিন্তু টেকনিক্যাল টার্মগুলো সব জানেন, অর্থাৎ তোমাকে খুব ব্যাখ্যা দিতে হবে না তোমার ব্যবহৃত পরিভাষাগুলোর। যেমন ধরো কোন বস্তু উপর থেকে পড়ছে, এক্ষেত্রে তুমি অভিকর্ষজ ত্বরণ অনায়াসেই লিখে দিতে পার। কিন্তু তুমি যখন সায়েন্স রাইটিং লিখবে তখন কিন্তু এইসব পরিভাষা যতটা সম্ভব পরিহার করে আমারা দৈনন্দিন যে ভাষা তা দিয়ে লিখতে হবে। যেমন ধর অভিকর্ষজ ত্বরণকেই হয়ত ভেঙে লিখতে হবে, মুক্তভাবে কোন বস্তু উপর থেকে পড়তে থাকলে যে হারে বেগ বাড়তে থাকে। সায়েন্টিফিক রাইটিং-কে অ্যাকাডেমিক রাইটিং-ও বলে, আমরা এখানে সাইন্টিফিক রাইটিং-ই বলব।

বৈজ্ঞানিক পেপার লেখা

কংগ্রেসে তোমরা সায়েন্টিফিক পেপার বা বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ ক্যাটাগরিতে যে লেখা দিচ্ছ তা কিন্তু সায়েন্টিফিক রাইটিং, সায়েন্স রাইটিং না। তোমরা যখন কোন একটা কাজ সায়েন্টিফিক মেথডলজি বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কর তখন নিশ্চয় এই ধাপগুলি ফলো করো: সমস্যা নির্ধারণ, তথ্য সংগ্রহ, অনুমিত সিদ্ধান্ত, পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং ফলাফল প্রকাশ। এই ধাপগুলোর শেষ হচ্ছে ফলাফল প্রকাশ। ফলাফলটা তোমরা কয়েকভাবে প্রকাশ করতে পার, একটা পদ্ধতি হল সায়েন্টিফিক পেপার লিখে। সায়েন্টিফিক পেপার আর সায়েন্টিফিক রাইটিং একই জিনিস। গত প্রায় তিনশ বছর ধরে সায়েন্টিফিক রাইটিং-এর একটা কাঠামো আস্তে আস্তে দাঁড়িয়ে গেছে। একটা পূর্ণাঙ্গ সায়েন্টিফিক রাইটিং বা সায়েন্টিফিক পেপারে মোটামুটি নিচের পয়েন্টগুলো থাকতে হবে। আগে আমরা পয়েন্টগুলো দেখে নেই, পরে প্রত্যেকটা নিয়ে কিছু আলোচনা করব।

  1. Title বা শিরোনাম
  2. Abstract বা সারসংক্ষেপ
  3. Introduction বা ভুমিকা
  4. Materials & Methods বা উপকরণ এবং কার্যপদ্ধতি
  5. Results বা ফলাফল
  6. Discussion বা আলোচনা
  7. Reference বা তথ্যসূত্র
  8. Acknowledgments বা কৃতজ্ঞতা স্বীকার

এই লিস্টে সর্বোচ্চ যে আটটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট একটা সায়েন্টিফিক পেপারে থাকতে পারে তা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনবোধে তোমরা দুয়েকটা পয়েন্ট চাইলে বাদ দিতে পারো, এমনকি যোগও করতে পার।
এবার আমরা সবগুলো পয়েন্ট নিয়ে আলাদা আলাদা আলোচনা করব।

1. Title বা শিরোনাম

তোমরা নিশ্চয় বুঝতে পারছ শিরোনাম মানে কী। শিরোনামটা কেমন হবে? আমাদের শুরুতে শেখা সায়েন্স রাইটিং আর সায়েন্টিফিক রাইটিং-এর আইডিয়াটা আমাদের শিরোনাম কেমন হবে বুঝতে সাহায্য করবে। সায়েন্স রাইটিং বা অন্য যে কোন সৃজনশীল লেখায় তুমি চমৎকার কোন একটা শিরোনাম দিলেই পার। এমনকি তোমার বিষয়ের সাথে হয়ত তেমন কোন সাযুজ্য নেই এমন কোন শিরোনামও দিয়ে দিতে পার, উপন্যাসের কোন এক চরিত্রের নামে দিয়ে দিতে পার উপন্যাসের নাম, কবিতার কোন এক লাইন থেকে হতে পারে কবিতার নাম। সায়েন্টিফিক রাইটিং এ কিন্তু তা চলবে না। তোমার শিরোনামের প্রথম শর্তই হল ইনফরমেটিভ বা তথ্যবহুল হতে হবে। তোমার পেপারটা কী নিয়ে তা যাতে তোমার পেপারের শিরোনাম দেখেই বোঝা যায় সেভাবে Title বা শিরোনাম ঠিক করতে হবে। শিরোনামটা দুই-এক শব্দের হওয়ার দরকার নাই, এক লাইনেরও হতে পারে। একটা উদহারণ দিয়ে বুঝাই, তুমি হয়ত গবেষণা করেছ উইপোকা এঁটেল মাটিতে বাসা বাঁধতে বেশি পছন্দ করে কিনা তা নিয়ে। এখন তুমি যদি শিরোনাম দাও ‘উইপোকা’ বা ‘উইপোকা ও এঁটেল মাটি’ তবে কিন্তু তা একটা সায়েন্টিফিক পেপারের জন্য উপযোগী হবে না। কারণ আমরা এই শিরোনাম দিয়ে তেমন কোন তথ্য পাচ্ছি না গবেষণা সম্পর্কে। এখানে সায়েন্টিফিক পেপারের জন্য শিরোনামটা হওয়া উচিত, ‘এঁটেল মাটিতে উইপোকা বাসা বাধার প্রবণতা পর্যবেক্ষণ’ বা এমন কিছু। শিরোনাম চাইলে তুমি একটা প্রশ্ন আকারেও রাখতে পার। যেমন আমরা আমাদের শিরোনামটা দিতে পারতাম, ‘বাসা বাঁধার জন্য এঁটেল মাটি কি উইপোকার পছন্দ?’ এখন কিন্তু বেশ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে শিরোনামেই।

শিরোনামের নিচে থাকবে তোমার নাম। যদি দলীয়ভাবে অংশ নাও তবে তোমার টিম মেম্বারদের নাম।

2. Abstract বা সারসংক্ষেপ

সারসংক্ষেপ লেখার সময় তোমাকে মাথায় রাখতে হবে, পাঠক কিন্তু প্রথমে এটা পড়বে, বিচারকও এটাই খুব ভালো করে পড়বেন। Abstract বা সারসংক্ষেপে তোমার পুরো কাজের সামারি দিতে হবে, এবং তা মাত্র কয়েক বাক্যে। ২০০-২৫০ শব্দের বেশি যাতে না হয়, এবং এক প্যারার মধ্যেই লিখবে। Abstract লেখার জন্য তুমি নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পার, প্রথমে এক-দুইটা বাক্য লেখ তুমি কোন প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছ, যদি প্রশ্নের উত্তর না হয়ে অন্য কিছু হয় যেমন পর্যবেক্ষণ, তাহলে সেই পর্যবেক্ষণ কী নিয়ে তা লেখ। এরপরে এক-দুইটা বাক্য রাখো কেন তুমি এই কাজটা করলে। তারপর একটা বা দুইটা বাক্য রাখ এটার সায়েন্সটা, অর্থাৎ এ বিষয়ে সায়েন্স কী বলে? তোমার কাজের পদ্ধতি রাখো পরের দুই বা এক বাক্যে। যেমন তুমি যদি তোমার কাজটা কোন জরিপের মাধ্যমে করে থাক তবে তা উল্লেখ কর, কতজনের মধ্যে জরিপ চালিয়েছিলে বলে দিতে পার। পরের বাক্য হবে তোমার প্রাথমিক ফলাফল কী? শেষে আরও দুই-এক বাক্যে বলে দাও তুমি কী সিদ্ধান্তে আসলে।

তুমি নিজের মত করেও লিখতে পার, তবে মাথায় রাখবে, Abstract লিখবে খুব সহজ ভাষায়, যাতে ওইটা পড়ার সময় বোঝার জন্য কিছু চিন্তা করতে না হয়। প্রত্যেকটা বাক্যই কিন্তু সামারি, সুতরাং কোন ভূমিকার দরকার নেই, তেমন কোন তথ্যের দরকার নেই।

3. Introduction বা ভূমিকা

সায়েন্টিফিক রাইটিং-এর ভূমিকা কিন্তু সায়েন্স রাইটিং-এর ভূমিকা থেকে একেবারে আলাদা। সায়েন্টিফিক পেপারের ভূমিকা কিন্তু বেশ বিস্তারিত হয়। তুমি কী নিয়ে কাজ করেছ তার মোটামুটি ভালোরকম একটা বর্ণনা দিতে হবে। কিছু পয়েন্ট দিচ্ছি, এইগুলো মাথায় রেখে লিখলে সহজ হবে।

পাঠক যাতে তোমার ভূমিকা পড়ে পুরো ব্যাপারটা মোটামুটি বুঝতে পারে। বুঝতেই পারছ, Abstract যেমন খুবই সংক্ষিপ্ত সামারি, Introduction একটু বিস্তারিত সামারি। এবং তা কিন্তু সামারিই, বিশাল করে ফেল না আবার।

4. Materials & Methods বা উপকরণ এবং কার্যপদ্ধতি

এই পয়েন্টটাতেই তুমি তোমার কাজের বিস্তারিত তুলে ধরবে। কাজটা কীভাবে করেছ, কী তথ্য ব্যবহার করেছ আর কী তথ্য পেয়েছ সব এই পার্টেই লিখবে। এই পার্টটা হল টেকনিক্যাল ডিটেইল, তুমি তোমার কার্যপদ্ধতির মধ্যে সবকিছুই বিস্তারিত লিখবে। তোমার এক্সপেরিমেন্টের বিস্তারিত তথ্য এইখানে দিতে হবে, যাতে অন্য কোন বিজ্ঞানী যদি তোমার এক্সপেরিমেন্ট রিপিট করতে চায় তবে তা যেন করতে পারে।

এই সেকশন লেখার জন্য প্রথমে দেখ তুমি কী কী কাজ করেছ, সেগুলো পয়েন্ট করে লিখ, প্রত্যেকটা পয়েন্টে যা করেছ একটু বিস্তারিতই লেখ। তুমি যে এক্সপেরিমেন্ট করেছ তা ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে লেখ এরপর। যে সকল যন্ত্রপাতি বা বস্তু তোমার গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে তার কোন লিস্ট দেওয়ার দরকার নাই। এমনিতেই তোমার এক্সপেরিমেন্টের বর্ণনায় চলে আসবে। আর খুব পরিচিত কোন এক্সপেরিমেন্টের বর্ণনা দেওয়ার কোন দরকার নাই। যেমন টাইট্রেশন করে কোন একটা এসিডের ঘনমাত্রা বের করলে কীভাবে টাইট্রেশন করেছ বলে দিলেই হবে, সবাই তা জানে।

কেউ যদি কোন সার্ভে করে থাক তবে সার্ভের পুরো পদ্ধতি এই সেকশনে বিস্তারিত তুলে ধরতে হবে। প্রথমেই তোমার সার্ভের স্যাম্পল কতজন এবং সার্ভের স্যাম্পল অর্থাৎ কাদের মাঝে সার্ভেটা করেছ তাদের স্পেসিফাই করে দাও। তবে কখনোই তাদের নাম পরিচয় দিবা না। তুমি তাদের স্পেসিফাই করবে তাদের বয়স, আর্থিক অবস্থা, লিঙ্গ, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি দিয়ে। সার্ভেতে কী কী প্রশ্ন ছিল এই সেকশনে সেগুলো দিবা। একটা ফিগার আকারে তোমার সার্ভে ফরমটা এই সেকশনে দিয়ে দিতে পার, তবে না দিলেও হবে যদি সবগুলো প্রশ্ন আলাদা করে লিখ। তোমার ফরমে যদি এমন কোন পয়েন্ট থাকে যা সার্ভে করার সময় তোমার কাজে লাগে নাই তাহলে ওইটা আর লিখতে হবে না।

কীভাবে সার্ভে করেছ, মানে তুমি নিজে গিয়ে কথা বলেছ না ফোন করে জেনেছ না পত্রিকা ঘেঁটে বের করেছ না অন্য কাউকে দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছ তা বলে দেওয়া জরুরি। সার্ভের প্রাপ্ত তথ্য এইখানে আলোচনা করার দরকার নাই। তবে স্যাম্পলের বয়স, পেশা, অন্যান্য তথ্য এই সেকশনে লিখবে, আগেই বলেছি।

একটা জিনিস মাথায় রাখবে, অন্য কেউ যখন তোমার কাজ রিপিট করার চেষ্টা করবে তখন সে যাতে করতে পারে ততটুকু তথ্য এই সেকশনে লিখলেই চলবে। যেমন ধরো তুমি তোমার বাসার ছাদে এবং নিচতলায় অভিকর্ষজ ত্বরণের মানের পার্থক্য সরল দোলক দিয়ে বের করতে চেয়েছ। এখন তুমি খুব সংক্ষেপে তোমার পদ্ধতি বললেই হবে, কীভাবে দৈর্ঘ মেপেছ, কীভাবে ভর মেপেছ এগুলো কখনই লেখার দরকার নাই, কারণ তোমার পাঠক এই বিষয়গুলো জানেন।
আরেকটা কথা, এই সেকশন পুরোটা হবে past tense-এ।

5. Results বা ফলাফল

তুমি গবেষণা করে যে বিভিন্ন তথ্য বের করেছ তার সবকিছুর রেজাল্ট এই সেকশনে লিখবে। রেজাল্ট লেখার সময় খেয়াল রাখবে, রেজাল্টে কিন্তু কোন ক্যালকুলেশন দিবে না, যেমন তোমার ক্লাসের সকল ছাত্রের উচ্চতার গড় যদি তোমার রেজাল্ট হয় তবে শুধু গড়ই উল্লেখ কর, কার বয়স কত ছিল বলার দরকার নাই।

এই সেকশনে তোমার প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যই শুধু দিবে, কোন ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করবে না কেন এমন হল। ধর তুমি একটা নতুন ধরনের পোকা খুজে পেয়েছ, যাদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে তুমি গবেষণা করেছ, তুমি দেখতে পেয়েছ, ওরা রোদে কখনও খেতে বের হয় না, তুমি এই সেকশনে লিখবে, ‘পাঁচদিনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পোকাটা কখনওই রোদে খেতে বের হয় না’। কেন রোদে বের হয় না তার ব্যখ্যা তুমি ডিসকাশনে দিবে, এখানে না।

যদি কোন সার্ভে থাকে তবে শুধু সার্ভের প্রাপ্ত রেজাল্টগুলো লেখ। কারণ ব্যাখ্যা করার দরকার নাই। পরের সেকশনে করবে।

রেজাল্টগুলো, তথ্যগুলো তুমি সরাসরি দিতে পার, যেমন, ‘একটি সাধারণ মুরগি সর্বোচ্চ এত কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে’। সরাসরি না দিয়ে তুমি তথ্যগুলো টেবিল করে বা গ্রাফ করে দিতে পার। বিভিন্ন ধরনের চার্ট আছে, তুমি প্রয়োজনমত যে কোনটা ব্যাবহার করতে পার।

তুমি যে কোন একটা তথ্য রেজাল্টে লেখার সময় চিন্তা কর, এটা কীভাবে দিলে সবচাইতে ভালো হবে, সরাসরি, টেবিল, গ্রাফ না চার্টে। তারপর সেই তথ্য লিখ। প্রত্যেকটা তথ্য লেখার সময় এটা একবার করে চিন্তা করতে হবে।

একটা টিপস দেই, গ্রাফ বা চার্ট থেকে খুব সহজেই কোন তথ্য সুন্দর করে বোঝা যায়, এজন্য বিজ্ঞানীরা যথাসম্ভব গ্রাফ-চার্ট বা টেবিলে তথ্য প্রকাশ করেন। তোমরা ব্যাপারটা মাথায় রেখ, সুন্দর হবে।

6. Discussion বা আলোচনা

এই সেকশনে তুমি যে রেজাল্ট পেয়েছ তার সব ব্যাখ্যা থাকবে। এক্সপেরিমেন্টে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য যা তুমি রেজাল্টে লিখেছ তা বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাখ্যা করবে। ধর তুমি অনেকের মধ্যে কোন বিষয়ে জরিপ করেছ, জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল কীভাবে একটার সাথে আরেকটা সম্পর্কযুক্ত তা তোমার যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে লিখতে পার।

হাইপোথিসিসে তুমি যে রেজাল্ট আশা করেছিলে সেই রেজাল্টই পেয়ে থাকলে কেন তোমার হাইপোথিসিস মিলল সেই কারণটা খুঁজে বের করে এইখানে লেখ। আর যদি হাইপোথিসিস না মিলে তাহলে কেন মিলল না বলে তোমার মনে হয় যুক্তিসহ লিখ। কোন নেগেটিভ রেজাল্ট পেলে তাও লেখ, এবং ব্যাখ্যা কর কেন এমন হল।

ডিসকাশন লেখার জন্য নিচের বুদ্ধিটা ফলো করতে পার। কাজ করার শুরুতেই নিশ্চয় তুমি কী নিয়ে কাজ করবা ঠিক করেছিলে, তুমি কী সমস্যার সমাধান বা কী কী প্রশ্নের সমাধান করবে তা লিখে নিয়েছিলে। প্রথমে ওইটা বের কর, দেখ, ওগুলোর কয়টা সমাধান হয়েছে। সেগুলোই তোমার মূল রেজাল্ট। প্রথমে একটা একটা করে ওইগুলি লেখ। এরপর লেখ অভাবনীয় কোন কিছু যদি কাজ করতে গিয়ে পেয়ে থাক সেগুলো। সবগুলোতেই কিন্তু তোমার যুক্তিসহ কারণ ব্যাখ্যা করবে। এবার হয়ত কয়েকটা পয়েন্ট লেখা হয়েছে, এর মধ্যে সবচাইতে আকর্ষনীয়টা প্রথমে, তারপরে একটু কম, তারপরে আরও একটু কম, এভাবে পয়েন্টগুলো সাজিয়ে নাও। এরপর তুমি কাজ করতে গিয়ে কোন ধরনের নেগেটিভ ফলাফল যদি পাও, যা তোমার যুক্তির বিপক্ষে কাজ করছে তবে তাও লেখ এবং ব্যাখ্যা করো কেন তা তোমার যুক্তি/ব্যাখ্যা মানছে না।

এরপর তোমার কী কী সীমাবদ্ধতা ছিল আলোচনা কর। তোমার এক্সপেরিমেন্ট বা টোটাল কাজের কী কী আরও ভালো করে করা যেত লিখ। তারপর লিখ আবার এই পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে তুমি কী কী পরিবর্তন করে আবার করবে, সেটা। সবশেষে লিখ তোমার কাজের ফলাফল কী কাজে লাগবে তা।

7. Reference বা তথ্যসূত্র

তুমি নিশ্চয় তোমার গবেষণায় বিভিন্ন সূত্র থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ব্যাবহার করেছ। সেই সূত্রগুলো যাতে নির্ভরযোগ্য হয় তা নিশ্চিত করবা সবসময়। অনির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য দেওয়ার চাইতে না দেওয়াই ভালো।

তথ্যসূত্র দেওয়ার কয়েকটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। তোমরা যে কোনভাবে দিতে পার। আগে খুব ব্যবহৃত হত একটা, এখনও বেশ প্রচলন আছে, তুমি যে তথ্যগুলো তোমার পেপারে ব্যবহার করেছ তার সবগুলো নাম্বারিং কর। এক্ষেত্রে কোন একটা তথ্য কত নাম্বার তা সুপারস্ক্রিপ্টে তথ্যে সাথে লিখে দাও। উদহারণ দেই,
Eventually Georges Méliès was made a Chevalier de la Légion
d'honneur (Knight of the Legion of Honor), the medal of which was presented to him in October 1931 by Louis Lumière.9

এই লেখাটা আমি উইকিপিডিয়া থেকে কপি করেছি, এই তথ্যটার সূত্রর নাম্বার ছিল নয়। আর এটার তথ্যসূত্র লেখা ছিল,
9 . Elizabeth Ezra. Georges Méliès: the birth of the auteur (Manchester: Manchester University Press, 2000). p.20.

একটু ব্যাখ্যা করি, এখানে প্রথমে আছে তথ্য নাম্বার 9, তারপর আছে লেখকের নাম। একটা ডট, বাংলার ক্ষেত্রে দাঁড়ি (।) ব্যবহার করতে পার। তারপর ব্র্যাকেটের মধ্যে প্রকাশনী, কমা দিয়ে কত সালে প্রকাশিত হয়েছে তা। এরপর আরেকটা ডট দিয়ে পৃষ্ঠা নাম্বার। বাংলায় পৃ. দিয়ে এটা বুঝাতে পার।

এখানে যেটা লিখলাম এটা আসলে একটা বইয়ের তথ্য। যদি কোন ওয়েবসাইট থেকে নাও তাহলে এভাবে লিখতে পার,
1 . Lucien Reulos (http://cinematographes.free.fr/reul...). Cinematographes.free.fr. Retrieved on 2013-08-16.
এইখানে কীভাবে লিখেছি নিশ্চয় বুঝতে পারছ।

অন্যকোনভাবে তুমি তথ্যসূত্র দিতে চাইলে দিতে পার। তবে তোমার সূত্র যাতে স্পেসিফিক হয় অর্থাৎ সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় এমনভাবে লিখ। যেমন www.google.com বা শুধু “ইন্টারনেট” কোন তথ্যসূত্র হতে পারে না।

8. Acknowledgments বা কৃতজ্ঞতা স্বীকার

এই পয়েন্টটা দেওয়া খুবই জরুরি, এটা সৌজন্যতারও অংশ। এখানে তুমি তোমার গবেষণা করার সময় বিভিন্নজনের থেকে যে বিভিন্ন সাহায্য নিয়েছ তার উল্লেখ করবে। এখানে যেমন ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে পার সেই সাথে কোন প্রতিষ্ঠানকেও কৃতজ্ঞতা জানাতে পার। কীভাবে লিখবে? প্রথমে একটা লিস্ট কর তুমি কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে কাদের সাহায্য নিয়েছ, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একবার চিন্তা করলেই সবার নাম লিস্টে এসে পরবে। এবার গুরুত্ব অনুসারে সিরিয়াল করে নাও তোমার লিস্ট।

লেখা শুরু করতে পার এভাবে, “যারা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময় আমাকে গবেষণায় সাহায্য করেছেন আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমার শিক্ষক লুতফর রহমানকে আমাকে সবসময় উৎসাহ যোগানোয়, আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই যুবায়ের রহমানকে আমার কম্পিউটার সিমুলেশনটা বানিয়ে দেওয়ার জন্য, ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট আনোয়ারকে ধন্যবাদ পিএইচ মিটারের রিডিংগুলো টেবুলেট করে দেওয়ার জন্য... ...।”

সামারি

তোমাদের নিয়মকানুনগুলোর একটা সামারি আবার করে দেই, যাতে কোন পয়েন্ট সহজে বুঝতে পার।

• Title বা শিরোনাম- কী নিয়ে কাজ করেছ।
• Abstract বা সারসংক্ষেপ- পুরো পেপারের সামারি, গবেষণার মূল কারণ, প্রাথমিক রেজাল্ট, মূল সিদ্ধান্ত কী।
• Introduction বা ভূমিকা- কেন গবেষণাটা করা হল।
• Materials & Methods বা উপকরণ এবং কার্যপদ্ধতি- কীভাবে গবেষণাটা করা হয়েছে।
• Results বা ফলাফল- কী পাওয়া গেছে বা কী আবিষ্কৃত হয়েছে।
• Discussion বা আলোচনা- কেন এই রেজাল্ট গুরুত্বপূর্ণ বা তা কী কাজে লাগবে? কোন তথ্য পাওয়া গেলে তা কেন অমন?
• Reference বা তথ্যসূত্র- কোন উৎস থেকে তথ্য ব্যবহৃত হলে তার তথ্য।
• Acknowledgments বা কৃতজ্ঞতা স্বীকার- যাদের সহায়তা নিয়েছ তাদের প্রতি সৌজন্যতা প্রকাশ।

কীভাবে লেখা শুরু করবে?

এতক্ষণ আমরা দেখলাম কী কী পয়েন্ট থাকতে হবে পেপারে, পয়েন্টগুলো লিখতে হবে পয়েন্টগুলো। কিন্তু শুরু করবে কীভাবে?

সায়েন্টিফিক পেপার লেখা শুরু করার অনেকগুলো পদ্ধতি আছে, সবচাইতে ভালো পদ্ধতি হল তোমার যে যায়গা থেকে শুরু করতে ভালো লাগে শুরু করে দাও।

খুব সহজ একটা বুদ্ধি শিখাই, প্রথমে রেজাল্ট লিখ, এরপর ডিসকাশন, ইন্ট্রোডাকশন, ম্যাটেরিয়ালস এন্ড মেথড, অ্যাবস্ট্রাক্ট, সবশেষে টাইটেল বা শিরোনাম। এই সিরিয়ালে লিখলে দেখবে লিখতে গিয়ে তেমন কোন কষ্ট করতে হচ্ছে না।

আরেকটা কথা, তোমার পেপারের সবগুলো পয়েন্টকে নাম্বারিং কর। নাম্বারিং শুরু করবে Introduction পয়েন্ট থেকে। মেইন পয়েন্টকে নাম্বার দিবে 1,2,3… … । আর সাব-পয়েন্টকে নাম্বার দিবে 1.1, 1.2,1.3… … … বা 3.1, 3.2, 3.3… … এভাবে। সাব পয়েন্টের ভিতরে আরও পয়েন্ট থাকলে সেগুলো দিবে 1.1.1, 1.1.2, 1.1.3… …।

শুভ কামনা তোমাদের জন্য, কংগ্রেসে এসো, দেখা হবে। শেষে একটা প্রশ্ন, বল তো, এই লেখাটা সায়েন্স রাইটিং না সায়েন্টিফিক রাইটিং?

লেখক—
ইবরাহিম মুদ্দাসসের
(কংগ্রেসের একাডেমিক টিমের সদস্য এবং
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী।)